মানুষের প্রবৃত্তি ও ধরণ জানতে তার ছোট ছোট আচার আচরণ বুঝলেই হয়

মানুষের আচরণগত প্রবৃত্তি ও ধরণ জানতে-বুঝতে কিংবা চিনতে বড় কোন সুচিন্তিত পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন নেই। ছোট-খাট অবচেতন আচার-আচরণগুলোয় বোঝা যায় কে কেমন উন্নত মানসিকতার অধিকারী।

মনে রাখবেনঃ
যে উদার, সে ফুটপাতের অচেনা মানুষের জন্যও উদার...
যে সংকীর্ণ, আপন ভাই বোনের জন্যও সে সংকীর্ণ...

মানুষের প্রবৃত্তি ও ধরণ জানতে তার ছোট ছোট আচার আচরণ বুঝলেই হয়

আল্লাহর বান্দাকে ক্ষমা করুন, বান্দার আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করবেন

অধিকাংশ ক্ষেত্রেেই আমরন আমাদের স্বভাবের ছোট-খাট অভ্যাসবশত খারাপ দিকগুলোর ব্যপারে মোটেও সচেতন হইনা । অর্থাৎ কি কারণে আমাদেরকে মানুষ হিংসুটে ভাবে, ছোটলোক ভাবে কিংবা সংকীর্ণমনা ভাবে ইত্যাদি নিয়ে যৌক্তিকভাবে ভাবিনা কিংবা ভাবলেও সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাই। উপরন্তু সমাজে একদল পরাশ্রয়ী বুুুুুুুদ্ধিজীবীরা অন্যকে না সমঝে সমাজিক নিয়ম, বিধি-নিষেধ তোয়াক্কা না করেই নিজের মতো চলার উপদেশ দিয়ে সমাজকে কলুষিত করছে।

আজকের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বহুদূর এগিয়ে গিয়ে পরিপক্ব হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার হার, শুরু হয়েছে উদ্ভাবনী ধারণা আয়ত্তের কৌশল, উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে জীবনব্যবস্থা । কিন্তু যতই শিক্ষিত হচ্ছি আমরা, ততই কমছে আমাদের মুল্যবোধ, মরে যাচ্ছে মহানুভবতা, তৈরি হচ্ছে ব্রেইনওয়াশড প্রজন্ম যারা কেবল টাকার পেছনেই ছুটছে।
মানুষেরই বা কি দোষ ? সমাজ মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে, লেখাপড়া করে ভাল জব, ভাল ক্যারিয়ার, আর প্রচুর টাকা কামালেই সম্মান আসবে প্রকৃত সফলতা আসবে।

বাবা-মা সন্তানদের জিজ্ঞেস করেনা লেখাপড়া করে তুমি কি হতে চাও ? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মাষ্টার নাকি সরকারি চাকুরে ?
বরং বাবা-মা নিজ স্বপ্ন চাপিয়ে দেয়।
কিন্তু হায় লেখাপড়া করে যে সবার আগে নিজের মনুষ্যত্বকে বিকশিত করতে হবে, পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে হবে এই শিক্ষাটা সচরাচর কেউই দেয় না। বরং স্কুল বাচ্চাদের বইতে, 'ময়লা আবর্জনা রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে ফেলুন' এই টাইপের কয়েকটা নীতিবাক্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরাও সময়ের সাথে সাথে এসব নীতিবাক্যের তাৎপর্যগুলোকে ঐ ডাস্টবিনেই ফেলে রেখে আজকের ভঙ্গুর সমাজব্যবস্থার পর্যায়ে এসেছি।

আজকে আমরা আমাদের সফলতার আদর্শ বানিয়েছি শালীনতা বিবর্জিত পুঁজিপতিদের, নীতিহীন কোটিপতিদের। যারা অর্থ উপার্জন, প্রতিষ্ঠা, নাম ও যশ পাবার জন্য মানুষের উপর অবিচার আর অন্যায় পথ অবলম্বন করতেও বিন্দুমাত্র ভাবেনা। যাদের আত্মপ্রতিষ্ঠার জৌলুসে ঢাকা পড়ে গেছে মেহনতি মেধাবী মানুষের মগজ চুষে খাওয়ার ঘটনাগুলো।

অথচ কতো ভাল হতো, যদি আমরা আমাদের আদর্শ বানাতাম হযরত আবু বকর(রাঃ), ওমর(রাঃ), ওসমান(রাঃ), আলী(রাঃ), তালহা(রাঃ), যুবাইর(রাঃ) ইত্যাদি পূণ্যবাণ ব্যক্তিদের । যারা নিজেদের সফলতার প্রমাণস্বরুপ দুনিয়াতেই জান্নাতের সনদ পেয়েছিলেন, যাদের মানুষ আজও স্বরণ করে শ্রদ্ধাভরে, যাদের একজীবনে শুধু রয়েছে ত্যাগেরই গল্প। আত্মপ্রতিষ্ঠা তারা চায়নি তবুও পেয়েছেন উপহার হিসাবে
আর যশ-খ্যাতি ?
তাও পেয়েছেন তারা, কিভাবে এসব গৌরব তারা পেয়েছিলেন তা আপনারাও ভালো জানেন।
শুধু তারা আমাদের বর্তমান আইডলদের মত টাকা উপার্জন, নাম, ক্ষমতা, যশ, খ্যাতিকে সফলতা ভাবেননি। তাইতো তারা নিষ্কলুষ, পবিত্র ও ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত আজও।

এই আত্মপ্রতিষ্ঠার পেছনে ছুটতে ছুটতে আমাদের অনুভূতিগুলো আজ এতটাই মরে পঁচে গেছে যে, অন্যায় করার পরও আর সেগুলো আমাদেরকে নাড়া দেয় না। বরং সেই অন্যায়গুলোকেই প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলার জন্ম দিই শিক্ষিত ও তথাকথিত স্মার্ট নামের ভালমানুষ আমরা। আমাদের ভালমানুষী ঐ নামাজ রোজা পর্যন্তই। কতই না ভাল হতো আজ আমরা আমাদের শিক্ষাকে কেবলই অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার না ভেবে মনুষ্যত্ব বিকাশের সোপান হিসেবে নিতাম, মানবিক সৎগুণগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতাম। তাহলে আমাদের শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য সার্থক হতো। আর যাই হোক মানুষের কষ্টের কারণ হবার আগে আমাদের শিক্ষা, বিবেক সামনে এসে দেয়াল হয়ে দাড়াত।

পরিতাপের বিষয় এটাই যে, সেই শিক্ষার কোন সার্থকতা নেই যে শিক্ষা আমাদের প্রকৃৃত মানুষ বানিয়ে তুুুুলতে পারেনা...

Post a Comment

Please do not enter any spam link...

Previous Post Next Post